হলুদ ট্যাক্সি—কলকাতার পথঘাটের এক অমোঘ পরিচিতি। বছরের পর বছর ধরে শহরের রাস্তায় এই গাড়িগুলোর দাপট কলকাতার প্রাণের স্পন্দন হয়ে উঠেছে। তবে দিনও
বদলাচ্ছে, আর বদলে যাচ্ছে হলুদ ট্যাক্সির অবস্থাও। কমছে সংখ্যায়, কমছে দৌরাত্ম্য। তাই প্রশ্ন উঠছে—একদিন কি হারিয়েই যাবে এই নস্ট্যালজিয়া-জড়ানো পরিবহন?
কোভিড মহামারির আগে শহরে প্রায় আঠেরো হাজার হলুদ ট্যাক্সি চলত। কিন্তু আজ তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ছয় হাজারে। লকডাউনের আর্থিক ধাক্কায় বহু ট্যাক্সি মালিকই গাড়ি বিক্রি করে অন্য ব্যবসায় পা বাড়িয়েছেন। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গাড়ির বয়সজনিত সমস্যা। অধিকাংশ অ্যাম্বাসাডর ট্যাক্সির বয়স পনেরো বছরের বেশি হয়ে যাওয়ায় নিয়ম মেনে সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উপরন্তু, অ্যাম্বাসাডর নির্মাতা হিন্দুস্তান মোটরস আর নতুন গাড়ি তৈরি করছে না। এর ফলে চলতি বছরের শেষে আরও চার হাজারের বেশি হলুদ ট্যাক্সি বন্ধ হয়ে যাবে বলে জানা গেছে। কলকাতায় ট্যাক্সি পরিষেবার শুরু ১৯০৮ সালে, তখন ভাড়া ছিল প্রতি মাইল আট আনা। ১৯৫৮ সাল থেকে হিন্দুস্তান মোটরস অ্যাম্বাসাডর তৈরি শুরু করে, যা ১৯৬২ সালে হলুদ ট্যাক্সি হিসেবে চালু হয়। রং হিসেবে হলুদ বেছে নেওয়ার কারণ ছিল এর সহজ দৃশ্যমানতা। রাতের অন্ধকারেও দূর থেকে এই রং নজরে আসে। গত ছয় দশকের বেশি সময় ধরে, শহরের নিত্যসঙ্গী হয়ে থেকেছে এই ট্যাক্সি। তবে আধুনিক কলকাতায় অ্যাপ ক্যাবের আগমন ও ট্যাক্সি চালকদের দুর্ব্যবহার অনেক যাত্রীকে হলুদ ট্যাক্সির থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। তবুও শহরের পুরনো বাসিন্দাদের কাছে এই ট্যাক্সির আবেদন আজও অটুট। কিন্তু ক্রমাগত সংখ্যা কমতে থাকায় আশঙ্কার মেঘ জমছে।
ট্যাক্সি চালক সংগঠনগুলি রাজ্য পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছে, পুরনো ট্যাক্সি বসে গেলেও সেই পারমিটে নতুন হলুদ রঙের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক। তাঁদের মতে, হলুদ ট্যাক্সি কলকাতার ঐতিহ্যের অঙ্গ, যা তুলে দেওয়া ঠিক নয়। যেমনটা ট্রাম প্রায় উঠে গেছে, তেমনই কি হারিয়ে যাবে হলুদ ট্যাক্সি? উত্তর এখনও অনিশ্চিত। তবে শহরের নস্ট্যালজিয়ায় মগ্ন মানুষ চান, এই ঐতিহ্যের বাহন যেন হারিয়ে না যায়। যতদিন সম্ভব, কলকাতার রাস্তায় হলুদ ট্যাক্সি ছুটে চলুক, এটাই তাঁদের প্রার্থনা।