ভাষাবীদেরা মনে করেন ‘রস’ শব্দ থেকেই ‘রাস’ শব্দের আগমন। এই রস আসলে কৃষ্ণ প্রেমের রস। কৃষ্ণের প্রতি গোপিনীদের উজাড় করা প্রেম নিবেদনের উৎসব হলো ‘রাস উৎসব’। আজ ১৫ নভেম্বর রাস পূর্ণিমা বা কার্তিক পূর্ণিমা। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ কার্তিক। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে সেদিন ২৯ কার্তিক বা ১৫ নভেম্বর শুক্রবার সকাল ৬ টা ২১ মিনিট থেকে তিথি শুরু। তিথি শেষ হবে ২৯ কার্তিক, শুক্রবার ১৫ নভেম্বর রাত ২ টো ৫৯ মিনিটে। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা অনুসারে পূর্ণিমা তিথি ২৮ কার্তিক, বৃহস্পতিবার থেকে পড়ছে। দিনটি ১৪ নভেম্বর। সেদিন ভোর ৫ টা ১৩ মিনিট ৩১ সেকেন্ড থেকে শুরু। তিথি শেষ হবে ২৯ কার্তিক শুক্রবার, অর্থাৎ ১৫ নভেম্বর রাত ৩ টে ২ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডে। রাস অবশ্য বসন্ত পূর্ণিমাতেও পালন করা হয়, যাকে ‘বসন্ত রাস’ বলা হয়।
বৈষ্ণবদের কাছে এই উৎসব খুবই আদরের ও পবিত্র। রাধা-কৃষ্ণকে কেন্দ্র করে গোপিনীদের উল্লাসের দিন এই রাস উৎসব। গোপিনী সহকারে রাধা ও শ্রীকৃষ্ণের বৃত্তাকার নাচের মাধ্যমে রাস যাত্রাকে ঘিরে এই পূর্ণিমা তিথি বিশেষ মাহাত্ম্য রাখে। মথুরা, বৃন্দাবন থেকে ওড়িশা, অসম, মণিপুরে এই রাস যাত্রা উপলক্ষ্যে ব্যাপক ধুমধাম সহকারে আয়োজন হয়। নদিয়ার শান্তিপুরে এই সময় ‘ভাঙ্গারাস’ এর আয়োজন হয়। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই রাস উৎসব বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। শ্রীকৃষ্ণ প্রেমকে উদযাপনের মাধ্যমেই এই রাস উৎসব উদযাপিত হয়। কথিত রয়েছে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমে ভাবিত হয় গোপিনীরা সংসার ত্যাগ করেন। গোপিনীরা মনে করেন শ্রীকৃষ্ণ একমাত্র তাঁদেরই। গোপিনীদের মনে এই অহংকার আসায় শ্রীরাধাকে নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ চলে যান। গোপিনীদের ভুল ভাঙে। তাঁরা শ্রীকৃষ্ণের স্তব করেন। গোপিনীদের মনবাঞ্ছা পূরণে এরপর প্রতি গোপিনীকে জাগতিক ক্লেশ থেকে মুক্ত করেন শ্রীকৃষ্ণ। মূলত, শ্রীকৃষ্ণ প্রেমের উৎসবকেই রাস পূর্ণিমায় উদযাপিত করা হয়। আজ শান্তিপুর, নবদ্বীপে খুবই উৎসাহের সঙ্গে পালিত হচ্ছে এই উৎসব। বৈষ্ণবেরা নিজেদের মধ্যে আজ আবির খেলায় মেতে উঠবে ও নিজেকে সম্পূর্ণভাবে কৃষ্ণ প্রেমে নিবেদন করবে।