মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার একটি ছোট গ্রাম মহাগাঁওয়ের রমেশ ঘোলাপের জীবনের গল্প সত্যিই অনুপ্রেরণা। শৈশবে পোলিওয় আক্রান্ত হওয়ায় তার বাঁ পা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। কিন্তু এই সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে তিনি আজ একজন সফল আইএএস অফিসার।
রমেশের বাবা গোরখ ঘোলাপের সাইকেল সারাইয়ের একটি দোকান ছিল। সেখান থেকে যা আয় হত, তা দিয়েই চার জনের দিন গুজরান হত। রমেশের এক দাদাও রয়েছে। স্থানীয় একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন রমেশ। শৈশব থেকে তিনি পড়াশোনায় ভাল। ফলে শিক্ষকদের ‘চোখের মণি’ হয়ে উঠেছিলেন।
দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময়েই রমেশের বাবা মারা যান। তখন এমন অবস্থা ছিল যে, বাবার সৎকার করবেন, সেই টাকাও ছিল না রমেশদের কাছে। প্রতিবেশীরাই টাকা জোগাড় করে দেন। সেই টাকা দিয়েই বাবার সৎকার করেন রমেশরা।
বাবার মৃত্যুর পর সাইকেলের দোকানও বন্ধ হয়ে যায়। সংসারে উপার্জনের ভার এসে পড়ে তাঁর রমেশের মায়ের হাতে। আত্মীয়দের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে চুড়ির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। মায়ের সঙ্গে এ গ্রামে ও গ্রামে ঘুরে ঘুরে চুড়ি বিক্রি করা শুরু করেন রমেশ।
এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও কিন্তু নিজের পড়াশোনার হাল ছাড়েননি তিনি। দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায়, রমেশ ৮৮ শতাংশ নিয়ে পাশ করেছেন।দ্বাদশ পাশ করার পর শিক্ষকতার পেশাকেই লক্ষ্য করে এগোতে থাকেন। এর জন্য ডিএড করেন তিনি। স্থির করেন, শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে সংসার চালাবেন। মাকে সাহায্য করবেন। পাশাপাশি একটি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কলাবিভাগে স্নাতকও করছিলেন। ২০০৯-এ শিক্ষকতার চাকরি পান।
কিন্তু এতেও যেন সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না রমেশ। ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য রমেশের মা সরকারি দফতরে ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কিন্তু কেউ সাহায্য করেননি। এই ঘটনা ভিতর থেকে রমেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সরকারি হাসপাতালে বাবার চিকিৎসার জন্য ভর্তি করাতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছিল, সেই ঘটনাও তাঁকে বিচলিত করেছিল।
কলেজে থাকাকালীন ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন রমেশ। কলেজের বেশ কিছু কাজের জন্য মহকুমাশাসকের কাছে যেতে হয়েছিল। তখনই তিনি দেখেছিলেন, এক জন মহকুমাশাসক বা জেলাশাসকের কত ক্ষমতা। আর সেই ঘটনাই রমেশের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
গ্রাম ছেড়ে পুণেতে চলে যান রমেশ। সেখানে একটি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। শিক্ষকতার কাজ থেকে ছ’মাসের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। পুণেতে গিয়ে ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন।
কঠোর পরিশ্রমের ফলে তিনি ২০১৭ সালের ইউপিএসসি পরীক্ষায় ৪৩৯তম স্থান অর্জন করেন। এবং তিনি একজন আইএএস অফিসার হিসেবে যোগদান করেন।
বর্তমানে তিনি মহারাষ্ট্র সরকারের স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত আছেন। তিনি একজন সফল আইএএস অফিসার হওয়ার পাশাপাশি একজন ভালো মানুষও। তিনি তার গ্রামে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।
রমেশ ঘোলাপারের জীবনের গল্প আমাদের শিক্ষা দেয় যে, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। যদি আমরা নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকি এবং কঠোর পরিশ্রম করি, তাহলে আমরা সবকিছু অর্জন করতে পারি।