পটলচেরা মায়াবী দু’চোখ। মুখে স্মিত হাসি। দুধেআলতা গায়ের রং। ক্যামেরার সামনে তাঁর এক মুহূর্তের উপস্থিতিই যথেষ্ট ছিল অনুরাগীদের বিভোর করতে তোলার জন্য। কিন্তু জানেন কি, যতটা গৌরবময় ছিল অভিনয়জীবন, ততটা উজ্জ্বল ছিল না মধুবালার ব্যক্তিগত জীবন। জানা যায়, অভিনেত্রীর জীবন প্রায় নষ্ট করে দিয়েছিলেন তাঁর নিজের বাবা-ই। আতাউল্লাহ খান। যাঁর নির্দেশই অক্ষরে অক্ষরে পালন করতেন প্রয়াত নায়িকা। কেমন ছিল সেই জীবন? কিংবদন্তির ৯২তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা যাক তাঁর তিক্ত অতীত।
মাত্র আট বছর বয়স থেকেই শুরু অভিনয়ের যাত্রা। ৩৬ বছর বয়সেই জীবনে ইতি টানেন। স্বল্প জীবনকালেই তিনি কুড়িয়ে নিয়েছিলেন নাম, খ্যাতি, যশ। তবুও প্রায় ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাঁর জীবন। জানা যায়, স্বেচ্ছায় নতুন ছবি বেছে নিতে পারতেন না তিনি। ছিল না বন্ধু বানানোর অনুমতিও। সব কিছুই চলত বাবা আতিউল্লাহর নির্দেশে।
একটি তামাকজাত দ্রব্য তৈরির কারখানায় কাজ করতেন আতিউল্লাহ। স্ত্রী আয়েশা বেগমের সঙ্গে তাঁর ১১টি সন্তান ছিল। যদিও কন্যাদের মধ্যে মাত্র পাঁচজনকেই বাঁচাতে পেরেছিলেন তাঁরা। বাড়ির কন্যা বাইরে গিয়ে কাজ করুক, একেবারেই নাপসন্দ ছিল আতিউল্লাহর। কিন্তু ছোট কন্যা মুমতাজের মধ্যেই তিনি পয়সা উপার্জনের সুযোগ দেখেছিলেন। এই মুমতাজই পরে হয়ে ওঠেন রুপোলি পর্দার মধুবালা। মাত্র সাত বছর বয়সের মধুবালাকে দেখে যেন রত্ন খুঁজে পেয়েছিলেন ‘বম্বে টকিজ’-এর কর্ণধার দেবীকা রানি। অন্যদিকে তাঁর বাবা আতিউল্লাহ তাঁর মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলেন সোনার ডিম দেওয়া হাঁস। কারণ পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জনের একমাত্র রাস্তা ছিলেন মধুবালা-ই।
জন্ম থেকেই অসুস্থ ছিলেন অভিনেত্রী। হৃদয়ে ছেদ ছিল তাঁর। দীর্ঘ অসুস্থতা নিয়েও কাজ করতে বাধ্য হতেন বাবার কারণেই। এক সময় শুটিং চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। রক্তবমি শুরু হয়। এর পরেও বাবার আদেশ মেনেই চালিয়ে গিয়েছিলেন কাজ। খুবই অল্প বয়সে অভিনয় জগৎকে চিরবিদায় জানালেও অনুরাগীদের মনে তিনি রয়ে গিয়েছেন অমর হয়েই।