৬ মাস পেরিয়ে গেল। ন্যায়-বিচার হল না। আজ থেকে ঠিক ৬টি মাস আগে কলকাতা শহরে স্বনামধন্য সরকারি হাসপাতাল আরজি কর-এ পৈশাচিক ঘটনার বলি হন সেই কলেজেরই ডাক্তারি পড়ুয়া। অভিযোগ, ধর্ষণ এবং হত্যা করা হয়েছিল তাঁকে। গত ৯ অগস্ট থেকে আজও রাজপথ থেকে সরেনি হাজার হাজার সহ-নাগরিক। বিচার মিলল না। আজ, ৯ ফেব্রুয়ারি, সেই ডাক্তারি পড়ুয়ার (যাঁর নাম দেওয়া হয়েছে, ‘অভয়া’, ‘তিলোত্তমা’) জন্মদিন।
কেমন আছেন অভয়ার বাবা ও মা? আর বাংলা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বারবার গলা ভারী হয়ে আসে অসহায় মা-বাবার৷ মেয়ের ছোটবেলার গল্প থেকে শুরু করে আরজি কর পর্যন্ত তাঁর যাত্রার কথা বলেন তাঁরা।
মেয়ের ঘরটিকে একদম আগের মতোই সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছেন বাবা-মা। তাঁর আঁকা ছবি, তাঁর পাওয়া সংবর্ধনার চিহ্ন, তাঁর সাজগোজের জিনিস, সব নিজের নিজের জায়গায় গোছানো।
মায়ের কথায় জানা যায়, মেয়ে সাজত না খুব একটা। সময় মিলত না। কিন্তু মাসকয়েক ধরে মনে আনন্দ ছিল তাঁর। আগামী নভেম্বরে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল যে। তাই কয়েকটি নতুন প্রসাধনী কিনে মাকে বলেছিলেন, “মা, এবার থেকে একটু ত্বকের চর্চা করব।”
নতুন বাড়ি বানানোর পর নিজে হাতে সবটা সাজিয়েছিলেন অভয়া। রঙের মিস্ত্রীদের সঙ্গে হাত লাগিয়ে রং করেছিলেন ঘরের একাধিক কোণা।
কিন্তু বাড়ির ছাদে গেলে যন্ত্রণাটা তীব্র হয়ে ওঠে বাবা-মায়ের। ছাদ ভর্তি ফুল গাছ। গাছের বড় শখ ছিল মেয়ের। কত রং চারদিকে। অথচ ফিকে হয়ে আসছে বাড়িটা। অভয়া চলে যাওয়ার পর গত ৬ মাস ঠিক করে গাছের যত্ন নিতে পারেননি তাঁর মা। শেষবার একটি নতুন গাছ কিনে মাকে তিলোত্তমা বলেছিলেন, “মা, এই গাছটায় সুন্দর লাল রং ধরবে। এটাকে বাঁচিয়ে রেখো।” মেয়ের এই কথাটুকু মনে করে মায়ের চোখে জল। স্বগোতক্তি করে অস্ফুটে আর্তনাদ করে উঠলেন, “গাছটাকে তো বাঁচিয়ে রেখেছি। কিন্তু তোকে আর বাঁচাতে পারলাম কই! দেখে যেতে পারলি না এই লাল রং।”
নির্যাতিতার মা বেশ কিছু দিন আগেই আবেদন করেছিলেন শহরবাসীর কাছে, সকলে যেন তাঁর মেয়ের ৩২তম জন্মদিনে একটি করে গাছ পোঁতেন এবং প্রদীপ জ্বালান। আর তাঁর মায়ের ইচ্ছাপূরণ করতেই জুনিয়র ডাক্তারদের কয়েকজন, দেবাশিস হালদার, কিঞ্জল নন্দ এবং আরও অনেকে সোদপুরে অভয়ার পাড়ায় সকলের হাতে গাছ তুলে দিচ্ছেন। পাশাপাশি বিনামূল্যে বাসিন্দাদের চিকিৎসা করে তাঁদের সহপাঠীকে উপহার দিলেন।