অফবিট

হিন্দু ধর্মে শাক্তধর্মে অবস্থান

শাক্তধর্ম কিন্তু হিন্দু ধর্ম থেকে পৃথক কোনো ধর্ম নয়। হিন্দু ধর্মের একটি বিশেষ দর্শনিক শাখা। শক্তধর্ম বিশ্বাস করে শক্তি রূপে দেবী শক্তি এই সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের কর্তৃ। তিনিই সমস্ত সৃষ্টি ও স্থিতির কেন্দ্রে অবস্থান করেন। শাক্তধর্মমতে, দেবী হলেন পরব্রহ্ম। তিনি এক ও অদ্বিতীয়। অন্য সকল দেব ও দেবী তার রূপভেদমাত্র। দর্শন ও ধর্মানুশীলনের ক্ষেত্রে শাক্তধর্মের সঙ্গে শৈবধর্মের সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। যদিও শাক্তরা কেবলমাত্র ব্রহ্মের শক্তিস্বরূপিণী নারীমূর্তিরই পূজা করে থাকেন। এই ধর্মে ব্রহ্মের পুরুষ রূপটি হল শিব। তবে তার স্থান শক্তির পরে এবং তার পূজা সাধারণত সহায়ক অনুষ্ঠান রূপে পালিত হয়ে থাকে। এখানে কখনো খনন শিব ও শক্তিকে ‘অভেদ’ কল্পনা করা হয়েছে। এই ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংস্কৃত সাহিত্য ও হিন্দু দর্শনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল শক্তিবাদ তথা তন্ত্র সাধনা। এমনকি আজও জনপ্রিয় হিন্দুধর্মের উপর এই মতবাদের প্রভাব অপরিসীম। ভারতীয় উপমহাদেশ ও তার বাইরেও বহু অঞ্চলে তান্ত্রিক ও অতান্ত্রিক পদ্ধতি সহ একাধিক পন্থায় শাক্ত ধর্মানুশীলন চলে।

 

 

 

শাক্ত সাধনার সঙ্গে তন্ত্র সাধনা অঙ্গঙ্গিভাবে যুক্ত। শাক্ত মতবাদ দৈব নারীসত্ত্বায় কেন্দ্রীভূত হলেও তা পুরুষ বা জড় দৈবসত্ত্বাকে অস্বীকার করে না। যদিও মনে করা হয় যে এই উভয় প্রকার দৈবসত্ত্বায় শক্তির উপস্থিতি বিনা নিষ্ক্রিয়। আদি শংকর তার প্রসিদ্ধ শাক্ত স্তোত্র সৌন্দর্যলহরী-র প্রথম পংক্তিতে বলেছেন, “শক্তির সহিত মিলিত হইলে শিব সৃষ্টিক্ষম হন; না হইলে তাঁহার আলোড়ন তুলিবার ক্ষমতা পর্যন্ত নাই।”এই হল শাক্তধর্মের মূলতত্ত্ব। আপাতদৃষ্টিতে প্রাণহীন শিবের দেহের উপর দণ্ডায়মান দেবী কালীর বহুপরিচিত মূর্তিটি এই তত্ত্বেরই মূর্তরূপ। তান্ত্রিকেরা সাধারণত শ্মশানে শক্তির সাধনা করেন। তবে বর্তমানে গৃহীরাও ঘরে শক্তি দেবীর পুজো করেন। যেকোনো অমাবস্যায় শক্তির পুজো সম্পন্ন হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Adblock Detected

Please Turn Off Your Ad Blocker.