ইতিমধ্যে লোকসভায় নতুন বিল ‘এক দেশ, এক ভোট’ পেশ করা হয়েছে ও ২৬৯-১৯৮ ভোটাভুটিতে লোকসভায় জয় হয়েছে ওই প্রস্তাবের। এখন প্রশ্ন কি আছে এই বলে? সহজ কথায় এর অর্থ হল গোটা দেশে একই সময়ে হবে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন। অর্থাৎ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের মেয়াদ শেষ হবে একই সময়ে। বর্তমানে আমাদের দেশে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন ভিন্ন ভিন্ন সময়ে হয়। যে রাজ্যে যখন সরকারের মেয়াদ শেষ হয়, তখন সেই রাজ্যে হয় বিধানসভা নির্বাচন। এই বিল নিয়ে প্রবল বিরোধিতায় সমস্ত বিরোধী দল। বৃহস্পতিবার সংসদের বাইরে হাতাহাটিতে জড়িয়ে পড়েন কংগ্রেস ও বিজেপির সাংসদরা। এমন কি মাথা ফেটে যায় বিজেপি সাংসদ সারেঙ্গির।
কেন এই বিল আনতে চাইছে শাসকদল? শাসক দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে –
* প্রথমত, এই নিয়ম চালু হলে কমবে নির্বাচনের খরচ।
* দ্বিতীয়ত, এক দেশ এক নির্বাচন হলে প্রশাসনিক দক্ষতা ও কার্যক্ষমতাও অনেকাংশে বাড়বে। লোকসভা বা বিধানসভা প্রতিটি নির্বাচনের সময়ে বহু সরকারি কর্মীকে কাজে লাগানো হয়। এতে প্রভাব পড়ে প্রশাসনিক কাজে।
* তৃতীয়ত, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের নীতি এবং কর্মসূচির বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও এই নীতি সহায়ক হবে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই লাগু হয় আদর্শ নির্বাচনী আচরণ বিধি।
* চতুর্থত, বিলের সমর্থনে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের দাবি, গোটা দেশে একসঙ্গে নির্বাচন হলে ভোটারদের মধ্যে তার ভালো প্রভাবই পড়বে। সকলে একসঙ্গে ভোট দেবেন। এতে বাড়বে ভোটের হারও।
কিন্তু এই বিলের ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রতিবান্ধকতা আছে, যা বিরোধীরা বার বার সামনে আনছেন। কি সেই প্রতিবান্ধকতা?
* প্রথমত, এই বিল আইনের পরিনত করতে গেল সংবিধান সংশোধন করতে হবে। শুধুই তাই নয়, পাশাপাশি পরিবর্তন করতে হবে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন এবং সংসদের কার্যপ্রণালীতেও।
* দ্বিতীয়ত, এক দেশ এক নির্বাচনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক দলগুলির সব থেকে বড় চিন্তা হলো, তারা আঞ্চলিক সমস্যাগুলিকে তুলে ধরতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় ইস্যুগুলিই গুরুত্ব পাবে প্রচারে।
* তৃতীয়ত,আঞ্চলিক দলগুলির পুঁজিও কম। তাই সে ক্ষেত্রে জাতীয় স্তরের দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রচার বা খরচ করাও সম্ভব হবে না আঞ্চলিক দলগুলির পক্ষে।
* চতুর্থত,একই সময় রাজ্য ও কেন্দ্রের ভোট হলে প্রভাবিত হতে পারেন ভোটাররা। এ নিয়ে ২০১৫ সালে একটি সমীক্ষা হয়েছিল। সেই সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, একই সময়ে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন হলে, ৭৭ শতাংশ সম্ভাবনা রয়েছে ভোটাররা একই দলকে দুই নির্বাচনে সমর্থন করবেন।
* পঞ্চামত, আরেকটা বড় সমস্যা হলো, ভারতের মতো এতো বড় দেশে, যেখানে বহু আঞ্চালিক উৎসব, ধৰ্মীয় উৎসব, পরব আছে সেখানে একসঙ্গে ভোট করতে গেলে কোনো না কোনো আঞ্চালিক উৎসবের মধ্যেই ভোট করাতে হবে।
এখন দেখার, শেষ পর্যন্ত বিষয়টা কোন দিকে যায়!!