মমতা সরকারের অনেক জনমুখী প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ‘তরুণের স্বপ্ন’। এই প্রকল্পরের অন্তর্গত ছাত্র-ছাত্রীদের ট্যাব কেনার জন্য ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া। কয়েক বছর ধরেই সেই টাকা ছাত্র-ছাত্রীরা পেয়ে আসছিল। কিন্তু এবার সেখানে থাবা বসিয়েছে সাইবার ক্রাইম। তদন্তে নেমেই রাজ্যের সাইবার ক্রাইম দপ্তর একটা সিদ্ধানে এসেছে যে, ট্যাব কেলেঙ্কারি বহু জায়গায় ছড়িয়ে গেলেও এর আঁতুরঘর উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া। লালবাজার সূত্রের খবর ট্যাব কেলেঙ্কারি রাজ্যের ১৫টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ লক্ষ লক্ষ টাকা পৌঁছে গেছে সাইবার অপরাধিদের হতে। ইতিমধ্যেই দায়ের করা হয়েছে অভিযোগ। কলকাতাতেও একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ট্যাব কেলেঙ্কারির আঁতুরঘর উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া। সেখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে এই সাইবার অপরাধ। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই পর্যন্ত তদন্তের আগ্রগতি সংতোষজনক। কিন্তু এসেছে একাধিক প্রশ্ন।
এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন, এই কেলেঙ্কারির মূল কেন্দ্রে তারা পৌঁছাবেই। ন্যাশানাল ইনফরমেটিকস সেন্টার ট্যাব কেলেঙ্কারির তদন্ত করছে। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র যেভাবে বাইরে আসা আটকানো হয়েছে সেভাবেই এই ট্যাব কেলেঙ্কারির বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে সমাধান করা হবে বলেও জানিয়েছেন ব্রাত্য বসু। রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ৭৮১ জন পড়ুয়া ট্যাব কেনার টাকা পায়নি। এরা সাইবার ক্রাইমের খপ্পরে পড়েছে। প্রথম ট্যাব কেলেঙ্কারির কথা প্রকাশ্যে আসে পূর্ব বর্ধমানে। তারপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে জেলা ও পড়ুয়ার সংখ্যা। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ১৫টি জেলায় জেলার মধ্যে ১৯৪টি স্কুলের পডুয়ারা ট্যাব কেলেঙ্কারির শিকার হলে তদন্তকারীরা জানিয়েছে। তবে ৮টি জেলায় এই প্রতারনার প্রভাব এখনও পরে নি।
প্রতারকেরা প্রধানত গরিব ও বয়স্ক মহিলাদের একাউন্ট টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়ে এই প্রতারনা চালাচ্ছিল বলেই খবর।
তদন্তকারীসূত্রের খবর, চোপড়া গোটা সাইবার ক্রাইমের আঁতুড়ঘর। সেখানে থেকে ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতার ছেলে। লালবাজার আরও ৬ জনের খোঁজ করছে। বাকিরা পলাতক। লালবাজারের অনুমান, সরকারি কোনও কর্মী এই চক্রের মাথাকে তথ্য দিচ্ছে। এটি স্পষ্ট করতে ফরেনসিক অডিট করা হবে এবং সবকটি দপ্তরের কম্পিউটারের আইপি অ্যাড্রেস খতিয়ে দেখা হবে। কলকাতায় দায়ের হওয়া অভিযোগগুলি খতিয়ে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চোপড়া, ইসলামপুর ও তার আশপাশের এলাকার বাসিন্দার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট টাকাগুলো ঢুকেছে। বছরখানেক আগে আধার কার্ডের ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা এইপিএস জালিয়াতি করে টাকা হাতানোর ঘটনা ঘটছিল। এবারও ঠিক সেইভাবেই টাকা হাতানো হয়েছে। তবে সময় এসেছে, আরও সাবধান হয়ে এই প্রকল্পের টাকা নির্দিষ্ট ছাত্র-ছাত্রীর একাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার। সরকারকে আরও তৎপর হতে হবে। বিশেষজ্ঞারা মনে করেন সর্ষের মধ্যে ভূত না থাকলে এতো বৃহত্তর কেলেঙ্কারি হতে পারে না।