বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ব্লকের রতনপুর গ্রামের দেবব্রত দত্ত মানব হৃদপিণ্ডের অজানা রহস্যের সমাধান বের করেছেন। তার আবিষ্কারের ফলে হৃদরোগ নিরাময়ের পথ সুগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেবব্রত দত্তের গবেষণায় দেখা গেছে, হৃদপিণ্ডের অলিন্দ বা নিলয় সঙ্কুচিত হওয়ার জন্য অ্যাক্টিন এবং মায়োসিন নামক দুটি প্রোটিন দায়ী। এই দুই প্রোটিন পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে একটি শক্তিশালী সংযোগ তৈরি করে। এই সংযোগের ফলে হৃদপিণ্ডের পেশীগুলো সংকুচিত হয় এবং রক্ত পাম্প করে।
অ্যাক্টিন এবং মায়োসিনের পারমাণবিক গঠনগত পরিবর্তন হলে হৃদরোগ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যাক্টিন বা মায়োসিনের পরিমাণ কমে যাওয়া, গঠনগত পরিবর্তন হওয়া বা এই দুই প্রোটিন পরস্পরের সাথে সঠিকভাবে যুক্ত না হওয়া।
দেবব্রত দত্তের গবেষণায় দেখা গেছে, মায়োসিন ফিলামেন্টের মলিকিউলার গঠন সম্পর্কে আগে জানা ছিল না। তিনি এই গঠনটি প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করেছেন। এই আবিষ্কারের ফলে হৃদরোগ নিরাময়ের জন্য নতুন নতুন চিকিৎসার পথ উন্মোচিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেবব্রত দত্তের গবেষণাটি ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল নেচারে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস মেডিক্যাল স্কুলে একজন হৃদ-বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন।
দেবব্রত দত্তের এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তাকে ভারত সরকার পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করেছে। তিনি বাঁকুড়া জেলার গর্ব এবং গোটা ভারতের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস।
দেবব্রত দত্ত ১৯৯৩ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর বাঁকুড়া জেলার ওন্দা ব্লকের রতনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মহাদেব দত্ত এবং মা সুমিত্রা দত্ত।
দেবব্রত দত্তের প্রাথমিক শিক্ষা রতনপুর গ্রামের একটি স্কুলে হলেও, মাধ্যমিক পাস করেন পুরুলিয়ার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন বাঁকুড়া ক্রিশ্চিয়ান কলেজিয়েট স্কুল থেকে।
কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে রসায়ন নিয়ে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। তারপর আইআইটি খড়্গপুর থেকে বায়োটেকনোলজি নিয়ে পিএইচডি করেন ২০১৯ সালে।
পিএইচডি শেষ করার পর তিনি আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অফ ম্যাসাচুসেটস মেডিক্যাল স্কুলে হৃদ-বিজ্ঞানের গবেষণায় যোগ দেন।
দেবব্রত দত্ত ছোটবেলা থেকেই মেধাবী এবং আগ্রহী ছিলেন। তিনি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে বিশেষ আগ্রহী ছিলেন। তার বাবা-মা এবং জেঠিমার উৎসাহে তিনি এই ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন এবং গবেষণায় অবদান রাখেন। দেবব্রত দত্তের এই সাফল্যে বাঁকুড়া জেলার মানুষ গর্বিত। তার এই আবিষ্কার গোটা বিশ্বের মানুষের জন্য আশার আলো দেখাবে।